Advertisement
Not a member of Pastebin yet?
Sign Up,
it unlocks many cool features!
- ফাহাদ স্যার - "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, Team FT Fast টিউটোরিয়ালের পরিবার।
- আজকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে লাইভে। তোমরা যারা আমাদের সাথে আছো, যারা আছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক; যারা গত দিনগুলোতে আমাদের জার্নির অংশীদার ছিলেন।
- এই ছাত্র আন্দোলনের অংশীদার হতে পেরে আমরা নিজেদেরকে গর্বিত মনে করছি। আজকের অবস্থানে বাংলাদেশের যে স্বাধীনতার গন্ধ পাচ্ছি এবং একটি সুন্দর বাংলাদেশ নতুনভাবে বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি, সেই স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে এসে আমরা টিম এফটির সমগ্র টিচার প্যানেল আজকে আমার সাথে আছি। কিন্তু আজকের এই ফ্রেমে আমাদের মাত্র ছয় জনকে দেখা যাচ্ছে , যেই ছয়জন আমরা কারাবন্দী ছিলাম, যেই ছয়জন আমরা জেলে ছিলাম, যেই ছয়জনের উপর দিয়ে থানায় নিষ্ঠুর অত্যাচার হয়েছে, আমরা আজকে তার সামান্য অংশটুকু শেয়ার করতে চাই। এবং আমার সাথে আমার শ্রদ্ধেয় মনির স্যার, আমার আবুল খায়ের, আমাদের অনারেবল এমডি, আমার শ্রদ্ধেয় রিপন স্যার, আমার রাজ তৌহিদুল ইসলাম রাজ, আমার অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট, এবং আমার সানি—এই ছয়জন মানুষ আমরা।
- আমরা যে আমাদের জার্নিটা ছিল, এই জার্নিটা শেয়ার করব। সো, সমগ্র বাংলাদেশের যত স্টুডেন্ট আমাদের সাথে, তোমরা যারা ছিলে, তোমরা জানো যে গত ৩১ তারিখ, তাই না, ৩১ তারিখ সকালে আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম।
- বুধবারের গল্পটা আমি চেষ্টা করব তোমাদেরকে ততটুকুই বলার, যতটুকু তোমাদের মনকে স্পর্শক কেমন করবে, আমি জানি না। আমরা যে পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করেছি, তার চাইতে অনেক বেশি কষ্ট আরো অনেক মানুষের আছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণ গেছে, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা যারা পুলিশের চাকরি করছেন, তাদের প্রাণ গেছে, অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে।
- অনেক মানুষের প্রাণ গেছে, পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাদ দিয়ে মানুষের অনেক প্রাণ গেছে, রক্ত ঝরেছে। এবং এই রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা এখানে। এখন আমি বাংলাদেশের এই অবস্থানটাকে স্বাধীনতার কোন মাত্রা বলবো, আমি জানি না। তবে আমাদের জায়গা থেকে এফ টেক হিসাবে আমাদের পথ চলাটা ক্লিয়ার করব। এই লাইভের শেষে, তোমরা যারা এই ভিডিওতে আছো, তোমরা যারা এই লাইভে আছো, তোমরা আমাদেরকে জানাতে পারো তোমাদের পরিকল্পনা বা তোমাদের মতামত, তোমাদের চাওয়া-পাওয়া। আমাদের সকল টিচার এখানে আছে, প্রত্যেকটা টিচার বসে আছে তোমাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য।
- এবং আমি তোমাদেরকে চাই যে তোমরা আমাদের সাথে থাকো। আমি গল্পটা তাহলে বলি। ৩১ তারিখ, বুধবার, আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম আমার অফলাইন ব্যাচে। তখন কয়টা বাজে জানিস? ১০:৪০। ১০:৪০ বাজে, রিপন স্যার তখন ক্লাসে ছিলাম, রিপন স্যার ইংলিশ ভার্সনে ক্লাস নিচ্ছিলেন। ইংলিশ ভার্সন অফলাইন ব্যাচে আমি বাংলা ভার্সন অফলাইন ব্যাচে এইচএসসি ২৬ এর ব্যাচে ক্লাস নিচ্ছিলাম।
- ক্লাসের মাঝখানে অন্ততপক্ষে ২৫ জন পুলিশ ঢুকলো অফিসে আমাদের অফিসে এবং এসে বলল যে আমাদেরকে খুঁজছে। আমাদের সাথে কথা বলতে চাইলে এবং আমাকে শেষ পর্যন্ত বলল যে, ওসি সাহেব আপনার সাথে কথা বলবে। এটা বলে আমাদেরকে অফিস থেকে নিয়ে গেল। অফিস থেকে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে এবং সানিকে নিয়ে গেল অফিসে। তারপরের ঘটনা সানি বলুক, সানি বলুক। তারপরের ঘটনা আমরা আসলে কি বলবো, কথা বলতে পারতেছি না।
- আসলে কিছু জিনিস স্মরণ করে, এই কয়দিন ভিতরে ছিলাম। আমরা যখন জেলখানায় ছিলাম, অনেক পরিবারের, মানে হাজার হাজার পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা হয়েছে। কত বাবা-মায়ের কান্না। তোমাদের কত যারা এখানে দেখতেছেন, কতজনের সন্তান নাই, ভাই-বোন নাই। মানে আমরা যখন তাদের কথাগুলো খুব বেশি মনে পড়তেছে। যাদের জীবন গেছে, আমরা তো দিন শেষে বাবা-মায়ের কোলে ফিরতে পারছি। বাবা-মায়ের কোলগুলো খালি হয়েছে।
- যাই হোক, ওই দিনের ঘটনাটা হচ্ছে, আমাদের অফিস থেকে, অফিসে আসলো, উনারা এসে কথাবার্তা বলার পর, অফিস থেকে আমাকে এবং স্যারকে নিয়ে বের হলো। বের হওয়ার পরে, আমাদের অফিসের পাশেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমরা তো ওইখান থেকে বলছিলাম যে কি বিষয় বা কি প্রয়োজন। তা বলল যে, ওসি স্যার একটু কথা বলবেন আপনাদের সাথে। স্যার কে বলছিল, আপনাদের সাথে কথা বলবেন, চিন্তার কোন কারণ নাই। চলেন একটু যাই তো।
- অল্প সময় পর, কিছুক্ষণ পর, ওনাদের গাড়ি আসলো। গাড়ি আসার পর, পুলিশের ভ্যানে যে সিটে বসেছিলাম, এই সিটে প্রথমবারের মতো বসছি। আমরা তো পুলিশের ভ্যানে করে আমাদেরকে নিয়ে গেল থানায়। থানায় যাওয়ার পরে, থানায় ঢোকার পরেই একটা কথা বলতে মানে, এটা অনেক প্রাউড ফিল হয় থানার গেটের সামনে।
- একটা স্টুডেন্ট ছিল, আমাদের হ্যাঁ, যে একজন স্টুডেন্ট, যুবরাজ। প্রাউড ফিল হয়, আসলে, হ্যাঁ, প্রাউড ফিল হয়। আসলে, দেখেন, আমরা যে পুলিশের উপরে লাগাতার আক্রমণ করতেছি না, সব পুলিশ তো এক নয়। সবার ফ্যামিলি তো একটা, সবাই সব রকম হয় না। ওই পুলিশের ফ্যামিলির ওর বাবা পুলিশ, ও দৌড়ো এসে ছুটে আসছিল। ও আপ্রাণ চেষ্টা করছে যেন আমাদেরকে না আটকায়।
- ও হয়তো সিচুয়েশনটা বুঝতে পারতেছিল। তখনও আমরা আশ্বস্ত ছিলাম যে, আমরা তো ওই লেভেলের কোন ক্রাইম করি নাই যে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে। তো, আমাদের ওই বিষয়টুকু বিশ্বাস ছিল যে, হয়তো বলছি স্যার, আমাদেরকে বলবেন যে স্টুডেন্টদেরকে একটু বুঝান, যারা যাতে এগুলো ভাঙচুরে না যায়। স্টুডেন্টদেরকে ইনকারেজ করেন, আমরা এইটুকু এক্সপেকটেশন আমাদের ছিল আর কি।
- তো, আমরা যখন অফিসে গেলাম, ওইখানে শুধু ওসি স্যার না, ওসি স্যারের উর্ধতন আরো কয়েকজন কর্মকর্তা বসা ছিলেন। তো, ওখানে যাওয়ার পরে আসলে ওইভাবে কথা বলার সুযোগ আর পাই নাই। আমরা কথা বলার সুযোগ পাই নাই। ফার্স্টে আমি আর স্যার গেলাম দুইজনের সাথে কিছু খারাপ ব্যবহার, মুখ দিয়ে হোক, মেন্টালি হোক, ফিজিক্যালি হোক, কিছু বাজে ব্যবহার আমাদের সাথে হয়েছে।
- তখন যখন আমাদের অফিস থেকে নিয়ে গেছি, ইতোমধ্যে অফিসে তখন আমাদের অফিস স্টাফ যারা প্রায় ম্যাক্সিমাম সবাই ছিলেন, তারা সাথে সাথে ফোন দিয়েছিলেন। ফোন দেওয়ার পরে, তখন কেউ তো আর বসে থাকতে পারেন নাই। আমরা হয়তো গেছিলাম সাহস নিয়েছে কারণ আমরা তো অপরাধ করি না, কিন্তু উনারা তো আর চিন্তিত কারণ যে পরিমাণে ঘুম হত্যা হচ্ছিল।
- তো, সাথে সাথে আমাদের এমডি স্যার এবং রিপন স্যার প্রথমত, দুজন দৌড়ে চলে গেল। দুজন একদম সাউন্ড, দুজন একদম দৌড়ে চলে গেল। আমাদের সাথে সাথে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম, ওনাদের একবার। আমরা ফিল করতেছিলাম রুমের বাইরে কেউ আছে। গেটটা একটু খুললো, আমি সাইড দিয়ে হালকা একটু দেখতে পাচ্ছিলাম যে রিপন স্যারকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। রিপন স্যার আসছে।
- তার কিছুক্ষণের মধ্যে, ওসি বলল যে, কারা আছে? ওনাদের দুজনকে ভিতরে আন। উনাদের দুজন ভিতরে গেল। উনাদের এস তো, আপনারা যারা দেখতেছেন, সবাই কল্পনা করতে পারে তো। উনাদেরকে যাচ্ছে, তাই গালিগালাজ ভাষা ব্যবহার উনাদের সাথে হয়েছে।
- উনাদের তো যদি স্টুডেন্টদের সাথে থাকা যদি অপরাধ হয়, সেই জায়গায় আমরা অপরাধী। উনারা আমাদের বাবার বয়সে, ওখানে যারা ছিল, কেউ উনাদের থেকে বয়সে বেশি ছিল, আমার কাছে মনে হয় না। উনাদের সাথে কথা বলা, উনাদের সাথে যে ব্যবহারগুলো। কিছুক্ষণ পরেই ক্যামেরা দিয়ে দেখতে পাইলো বাইরে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে। তো ভিতরে একজন এসে বলতেছে কি? বাইরে আরেকজন আসছে।
- বলে, নাম বলে মনির আল ইসলাম বলে আনেন, উনাকেও ভিতরে আনেন। স্যার গেল, স্যারের আমার বাবার দুই-তিন ব্যাচ জুনিয়র হচ্ছে। স্যার আমার বাবা তো, স্যার গেল। স্যার যেই প্রতিষ্ঠান বিলং করে বুয়েট, আমাদের বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, পাবলিকের ভিতরে আমরা যে টপ লেভেল, সবার যা স্বপ্ন থাকে বুয়েট ৯৭ ব্যাচের স্যার গেল।
- পরিচয় দিল যে, এখানকার আমরা এখানে আছি। মানে, আমরা এতবার তাদেরকে সিচুয়েশন বুঝানোর চেষ্টা করছি যে, আপনারা একটু প্লিজ আমাদের কথাটা শুনেন, আমাদের অ্যাক্টিভিটিসটা দেখেন। আমরা কোথায় গিয়েছি, কি করেছি, স্টুডেন্টদের সাথে এখানে আমাদের ইনভলভমেন্ট কতটুকু, কোন জায়গাটা স্টুডেন্ট করেছে আর কোন জিনিসগুলো স্টুডেন্ট করে নাই, কোন সম্পদ রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো স্টুডেন্টরা ভাঙছে আর কোথায় স্টুডেন্টরা যায়নি। আমরা কোন জায়গাতে ছিলাম, বলার কোন সুযোগ দেয়নি।
- স্যারকেও ফিজিক্যালি টর্চার করছেন। এই যে ব্যবহারগুলো, মানে, একটা আতঙ্কে ছিলাম। এবং সবার শেষে, ওরা আমাদের ফোনগুলো সার্চ করতেছিল। অনবরত, অনবরত। সবার শেষে, এই যে আমাদের ছোট ভাই, আমাদের অফিসের, মানে, বলা চলে যে আমাদের সবার অনেক আদরের অফিসের। যেকোনো কিছু হইলেই, সবার আগে আমরা রাজকে খুঁজি। সবার আগে হচ্ছে, আমরা রাজকে খুঁজি।
- হ্যাঁ, অফিসে যতবার রাজ শব্দটা উচ্চারণ হয়, এটা আসলে আমাদের অফিসে কেউ আসলেই বুঝতে পারবে। তো সর্বশেষ, ওকে অফিস থেকে নিয়ে গেল। অফিস থেকে নিয়ে গিয়ে, ওকেও আমাদের সাথে। একটা কথা খুব কানে বাজে। আমিও মাঝে-মধ্যে, হয় না যে খারাপ সময় গেলে ঘুমের ভিতর দুঃস্বপ্ন। ওকে যখন প্রথম আমাদের পাশে আনলো, ততক্ষণে আমি ফাহাদ স্যার খুব ভাবে আহত। আমরা বুঝতে পারতেছিলাম না, শুয়েছিলাম ও পাশ এসে বলতেছে ভাই, আমাকেও কি মারবে? কথাটা মানে, এরকম ভাবে, ও যখন বলতেছিল, ওর চোখ ছলমল করতেছে, আমাদের চোখ দিয়ে তখন অনবরত পানি বের হচ্ছে।
- ও হুট করে এসে বলে যে, ভাই আমাকে কি মারবে? তখন আমি বলতেছি কি? যে, দেখ, আমাদের হাতে তো কিছু নেই। তবে মনে হয় না আর কাউকে টর্চার করতে। এই লাইন থেকে আমি বলি, ওইদিন রুমের মধ্যে কী হয়েছে আমাকে এবং সানিকে যখন প্রথমবার নেওয়া হলো, রুমের মধ্যে ওইদিন কী হয়েছে, এটা আমি বর্ণনা করতে চাই না। নিঃশংসতার কী হয়েছে, আমার শরীরে এখনো ক্ষতচিহ্ন আছে। আমি এই ক্ষতচিহ্নের বিবরণটা এখন বলতে চাচ্ছি না। এটা অন্য কোন এক সময় বলবো।
- আল্লাহর কাছে একটা আবেদন করেছি: আল্লাহ, তুমি যদি ২০ মিনিট সময় দাও, আমি সেই সময়টুকুতে কিছু বলতে চাই ২০ মিনিট ২০ মিনিটের মতো মারা যেতাম এবং এই ২০ মিনিটে স্যার এগুলা কথা বলবে, স্যার এগুলা। আমি আসলে ফিজিক্যালি টর্চার নিতে পারি, ঘটনা হচ্ছে আমাকে, অন্তত আমার উপরে যতটা আঘাত আসছে তার চাইতে আঘাত বেশি গেছে গুরুর উপরে। এই মানুষটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে, তারপর আমার ওয়াইফওকে টার্গেট করা হয়েছে যে, ও কী পোস্ট দিয়েছে। আমাদের টিচাররা কী পোস্ট দিয়েছে, প্রত্যেকটা টিচারের পোস্ট ওদের সামনে ছিল। এবং আমার কাছে মনে হয় যে কোনো না কোনোভাবে এই ইনফরমেশনটা আমাদের ইন্টার্নাল ইনফরমেশনটা আমরা যখন টের পাচ্ছিলাম যে আসলে আমাদের উপরে কী হচ্ছে। সানি যতটা চর খাইছে, সানি যতটা মানে বেতের বাড়ি খাইছে, আমার সারাজীবনের বেতের আমাকে ফিজিক্যালি যে পরিমাণ মারা হয়েছে, এটার বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তারপর আমার হ্যান্ডকাফ লাগালো, হ্যান্ডকাফ লাগানোর পর থানার হাজতে দেখা হলো। থানার হাজত থানার হাজতে যাওয়ার পরে- হাজত তো জীবনে দেখি নাই। যে হাজত জিনিসটা কেমন, এমন হাজত জিনিসটা যে কী, এটা তো আমরা মুভিতে দেখতাম। জীবনে রিয়েল লাইফে বেল্ট খোলো, পকেট থেকে সব বাইর করো, মানি ব্যাগ টানি, ব্যাগ সব বাইর করো, বাইর করে একদম বডিটা সহ একটা নিথর বডি যে বডিটাতে মারা হয়েছে, হ্যান্ডকাফটা খুলে হাজতে। হাজতে দেওয়ার পরে আমি শুয়ে পড়লাম। রিপন স্যার বিশ্বাস করতে পারতেছিল না যে আসলে হচ্ছে কী। উনি তখন আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করতেছিল, স্যার আপনি একটু সহ্য করেন। ততক্ষণে আমার অবস্থা কাহিল, মানে আমি আমার হাত নড়তেছিল না। এমন সময় থানার ভিতরে আমাদের জন্য দুপুরের খাবার আসলো। দুপুরের খাবার দিছে ভাত আর কী জানি মুরগির মাংস আর কিছু একটা শাক। আমার মনে হচ্ছিল যে সারভাইভাল ক্যাপাসিটি যে এই মুহূর্তে সারভাইভ করতে হবে। আমারে তো পিটাইছে, সানিরে পিটাইছে, সানির হাত এখনো দাগ আছে। আমার পায়ে তো দাগ আছেই। বলতে চাচ্ছিলাম না কথা, কিন্তু ইনফরমেশন চলে আসতেছে। এরপরে হাত দিয়ে কোনো মতে খাইলাম। খাওয়ার পরে ওইখানে কতক্ষণ সানি স্টে করলাম। স্যার প্রথমে ৪০ মিনিট পরে ওরা ইন করেছে, তারপর আমাদের প্রায় দেড় ঘন্টা সাড়ে তিনটা, চারটা। হ্যাঁ, সাড়ে তিনটা, চারটা। সাড়ে তিনটা, চারটা পর্যন্ত আমরা থানার হাজতে ছিলাম। আমার এই যে অফিসের যত স্টাফ এখানে আছে, ক্যামেরাটা ঘুরাইলে দেখা যাবে এখানে অন্তত ২০-২৫ জন আছে। কেউ হ্যাঁ, আমার এই অফিসের স্টাফরাও পর্যন্ত এই গল্প জানে না। আমি আজকে লাইভে এই সকল টিচার রিলাক্স। রিলাক্স, আমার এই টিচার এনারা কেউ জানে না, কিন্তু গল্প আমি সাড়ে সাতটা লাইভ করবো বলছিলাম। হ্যাঁ, যান, যান, যান, হ্যাঁ সাড়ে সাতটা লাইভ করবো বলছিলাম। না, আমার এখানে আসতে দেরি হয়েছে। এনার কাউকে আমি কিছু বলতে পারি নাই। আমার সাড়ে সাতটা লাইভ করবো, দেরি হয়ে গেছে। এই স্টোরিটা আমি এখনই বলতেছি, মানে এটা একদমই হচ্ছে, মানে এই মুহূর্তের বলা স্টোরি। এটা মানে লাইভে আমি বলতেছি, আমার টিচারও শুনতেছে স্টোরিটা। হ্যাঁ, কারো সাথে শেয়ার করি নাই, সুযোগই হয় নাই তো গুরু অনেক বলতে ইচ্ছা করতেছে-ফাহাদ স্যারের গলা ভারী হয়ে গেল। গুরু বল- বলেন, আপনি বলেন, বললে হালকা হতে পারবেন, বলেন।
- স্যার পুনরায় শুরু করলেন- থানার হাজতে তখন কয়টা বাজে গুরু। সাড়ে চারটা? সাড়ে চারটা, হ্যাঁ, সাড়ে চারটায় আমাদের থানার হাজত থেকে বাইর করলো, হাতে হ্যান্ডকাফ। মানে নিজেরে মনে হইতেছিল আমরা কি পতঙ্গ, মানে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে এই বাইর হও। বের করলো, বের করার পরে আমাদের তিনজনের ছবি তুললো। আমাদের, হ্যাঁ, ভুল হলে আপনি একটু মনে করিয়ে দিয়েন। তিনজনকে থানার হাজত থেকে বের করে এমনে করে একটা ছবি তুললো। আমি ছবি তোলার পরে তখন শাহেদ ভাইয়ের সাথে আমার দেখা। আর সানির ফুফু ছিল। তখন অলমাইটি ব্লেসে উনাকে আল্লাহ পাঠাইছে সামহাউ এবং উনি আমাদেরকে, আমার মনে হয়েছে যে। সামবডি, তারপরে হচ্ছে আমাদেরকে কী করলো। থানার হাজত থেকে প্রিজন ভ্যানে, প্রিজন ভ্যানে ঢুকায়, পাঠায়, দিল। আমরা তো কিছুই বুঝি না কোথায় যাচ্ছি। প্রিজন ভ্যান থেকে আমাদের তিনজনকে নিয়ে ঘুরে আবার একটা, কতক্ষণ গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আবার থানায়।
- থানায় ডিসি অফিসে নিয়ে যাচ্ছিল সম্ভবত রিভাইস করার জন্য। আরেকবার করার জন্য। হ্যাঁ, না, তখন আমার তখন কী মনে হচ্ছিল, ডিসি অফিসে, না ডিসি অফিসে যাচ্ছিল , ডিসি অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল- এটা তখন আমাদের ধারণা ছিল না। কারণ আমি যেটা বলি, আমি যেটা বুঝতে পেরেছি সেটা হচ্ছে যে, যখন আমাকে অ্যাসল্ট করছিল, আচ্ছা, যখন আমাকে করছিল, ওই সময় হচ্ছে যে স্টুডেন্ট জড়ো হয়ে গেছে কাজীপাড়া এবং এই ১২ নাম্বার সাইডে, ১৪ নাম্বার সাইডে এক নাম্বার সাইডটা ফাঁকা আছে। সেজন্য তারা আমাদেরকে এসএল করাটা বন্ধ করে দেয় ওই মুহূর্তে। এসএল করাটা বন্ধ করে দিয়ে উঠে যায়। উঠে যায়, আমাদেরকে হাজতে দিয়ে দেয়। তারপর তারা ওইখানে ইয়াতে চলে যায়, ডিসি অফিসে চলে যায়। এবং সেখান থেকে কল করেছে। এটা আমি বলতে শুনেছি। যখন আমাদেরকে বের করছিল বলছিল যে আমরা ডিসি অফিসে যাব। এবং আমাদেরকে এদিকে যাওয়া ছিল। এবং এর আগে যাদেরকে এ ধরনের করা হয়েছে, তাদেরকে ডিসি অফিসে পুনরায় নিয়ে আসল করা হয়েছে। সো, ওইখানেও সম্ভবত ওরা স্টুডেন্ট কন্ডিশন খারাপ দেখে, স্টুডেন্টরা ব্যারিকেড দিয়ে ফেলেছিল। সম্ভবত, আমার যেটা মনে হয়, আমরা তো ভেতর থেকে খুব একটা অবজার্ভ করতে পারিনি। তো ব্যারিকেড দিয়ে ফেলার কারণে তারা গাড়িটা ঘুরায় নেয়। ঘুরায় নিয়ে পুনরায় থানায় ব্যাক করে। আবার ব্যাক করে থানায়। থানায় ব্যাক করার পর, তখন আমরা তো আর টেনশন যে ঘুরে থানা থেকে। তখন কতক্ষণ গাড়িটা চলছে, ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট, ১২-১৫ মিনিট। ১৫ মিনিট গাড়িটা গেল। গাড়িটা গেয়ে আবার ঘুরে হচ্ছে আবার থানায়। থানায় থেকে আসার পরে, বাকি যে তিনজন, আমাদের টোটাল ছয়জন, আমাকে, গুরুকে, সানিকে নিয়ে, বাকি তিনজনকে নিয়ে এবার চলে গেল ডিরেক্ট ডিবি অফিসে। তো ডিবি অফিসে যাওয়ার পর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো যে, ডিবি অফিস আমাদেরকে রিসিভ করলো এবং তারা আমাকে চিনতে পারলো। ডিবি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে চিনতে পারছে। যে আপনার ক্লাস তো আমার মেয়ে দেখে, আপনার ক্লাস তো আমার ছেলে দেখে। এবং আমার কাছে তখন রিলিফ লাগতেছে ছিল, আমাদের সবার কাছে। যে মানে আমরা একটু হ্যাপি ফিল করতেছিলাম যে, আমরা মনে হয় একটা ভালো জায়গায় আসছি। ভবিষ্যৎ একেবারে আননোন ছিল আমাদের, যে আমাদের সাথে কী হবে। ডিবি অফিসের লোকজন বলতেছিল যে, আপনারা এখানে কিভাবে মানে আমিও তো আমরাও তখন খুলে বলতে পারছিলাম না। তো ডিবি অফিসে আমরা, এটা ভয়ে ছিলাম যে আমাদেরকে পুনরায় মারধর করা হবে। কিন্তু সারপ্রাইজিংলি ডিবি অফিস আমাদের প্রথমে প্রোফাইলিং করলো। প্রত্যেকের এভরি সিঙ্গেল ডেটা ইনপুট করা হচ্ছিল। প্রত্যেকে, আমার একেকজনের ডেটা ইনপুট করতে মিনিমাম ২০ মিনিট, ২০-২৫ মিনিট করে। তা ছয় জন মানুষের এক ঘন্টা ২০ মিনিট। আমরা শুধু এক জায়গায় বসেছিলাম। এই বডিতে আঘাত নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে গেলে হ্যান্ডকাফ করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়, হ্যান্ডকাফ পরে নিয়ে আসে। এই অবস্থায় প্রোফাইলিং করতে করতে প্রো
- ### **বুধবার দিবাগত বৃহস্পতিবার ভোর**
- রাত সাড়ে চারটার দিকে ফজরের আজান শুরু হয়। আস্তে আস্তে পৌনে পাঁচটা বেজে যায়। আমরা তখন বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালে চলে এসেছি। বৃহস্পতিবার সকালে আমাদেরকে সাড়ে চারটার সময় ডিবি হাজতে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে আমাদেরকে ছোট ছোট কক্ষে রাখা হয়, যেখানে ২০-২৫ জন মানুষ ছিল। আমি সেখানকার জায়গাটি দেখে মনে করি আল্লাহ আমাকে ভালোবাসার জন্য এমন জায়গা দিয়েছেন, যেখানে আমি কিছুটা ঘুমাতে পেরেছি।
- সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ থানার লোকজন এসে আমাদেরকে উঠিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলল। প্রিজন ভ্যানে করে আমাদেরকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হলো। কোর্টে সিএমএম কোর্টে আমাদের চালান করা হলো। সেখানে গারদে রাখা হলো, যেখানে অনেক আসামী একসাথে রাখা হয়।
- সিএমএম কোর্টের গারদে আমরা যখন ঢুকলাম, তখন আমাদের নাস্তা দেওয়া হলো। নাস্তা ছিল কেক, রুটি, কলা এবং পানির বোতল। আমি এই খাবার দেখে আল্লাহর রহমতের অনুভব করলাম, যদিও পরিস্থিতি কষ্টকর ছিল। দুই ঘণ্টার মধ্যে আরও লোকজন আসা শুরু হলো। আমরা প্রায় ২০০ জনের বেশি লোকের মধ্যে আটকা পড়লাম, শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম যে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করুন।
- ওকালতনামা আসার পর আমাদের বুঝতে পারলাম যে আইনজীবী আমাদের জন্য লড়বেন। তখন মনে হলো আমাদের পরিবারের কেউ অপেক্ষা করছে বা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। থানার হাজত থেকে ডিবি হাজতে গিয়ে, তারপর সিএমএম কোর্টে আমাদেরকে পাঠানো হলো।
- ওকালতনামা সাইন করার পর আমাদেরকে লাইন ধরে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো। স্যারদের নামও প্রথমেই পাওয়া গেল, যেমন রিপন স্যার, রাজ স্যার, রিকন স্যার, এমডি স্যার। রাজ স্যার ও রিকন স্যার খুবই চিন্তিত ছিলেন এবং কাঁদছিলেন।
- এক এক করে আমাদের ওকালতনামা আসতে লাগলো। এমডি স্যারসহ অন্যদের কোর্টে উঠানো হলো, কিন্তু আমি নিজে কোর্টে উঠানোর আগে হ্যান্ডকাপ পরানোর সময়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। রাজ স্যারের হ্যান্ডকাপ দুই হাত পিছনে বাঁধা হলো, যা খুবই দুঃখজনক মনে হয়েছিল।
- কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের পরিচিত ভাইয়া, ভাবী, ফাহাদ স্যারের আম্মা, এবং নীলা ভাবী এসে দেখা করলেন। ভাবী ও অন্যরা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন ফাহাদ স্যারের সম্পর্কে। আমি বারবার বলছিলাম, ফাহাদ স্যার আমার সাথেই আছেন।
- তারপর, যখন ভাবীকে ছাড়াতে বৃষ্টি শুরু হলো, তখন ভাবীকে আর নিয়ে যাওয়া হলো না। ভাইয়া আমাকে সাহস দিলেন। পুলিশের সাথে ঝগড়া করে ভাইয়া আমাকে নিচে নামালেন। তখন আমি খুবই কান্নাকাটি করছিলাম।
- সর্বশেষে, আমাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। এরপর, সিএমএম কোর্ট থেকে আমাদের সবাইকে প্রিজন ভ্যানে তুলে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হলো।
- কেরানীগঞ্জ যখন আমরা আসলাম, মানে দেখলাম কেরানীগঞ্জে তখন সুন্দর একটা জেলখানাও আমাদের কাছে মনে হইলো মাশাল্লাহ। কোথায় আসলাম সুন্দর জায়গা, একটা পার্কে ঢুকলাম। হঠাৎ করে ঢুকলাম, মন ভালো হয়ে গেল। কিসের মধ্যে মানে ততক্ষণে জীবনের আশা তো গেছেই, কোথায় যাচ্ছি তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নাই। জীবনের আশা তো গেছে। এখন আমি আর সানি সানি। একবার আমার সাথে গুরুর হ্যান্ডকাপ, একবার আমার সাথে রিপন স্যারের। রিপন স্যার এখনো কথা বলেন। রিপন স্যার, আপনি জাস্ট কোন জায়গা থেকে বলতে চান আমাকে একটু বইলেন আপনি জেলখানায় গল্পগুলো আমাদেরকে। জেলখানায় যখন ঢুকালো, জীবনে তো ওই রোডে ৫০ বার গেছি আসছি মাওয়া রোডে। কিন্তু এইটা যে এখানে একটা, এখানে যে আলাদা একটা গল্প আছে, একটা আলাদা জগত আছে, এটা প্রথম দেখলাম। তো, সুন্দর ফুলের বাগান ঢুকলাম।
- ঢুকানোর পর সবচাইতে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে ওই যে ব্যাঙের মত করে বসায় রাখা। প্রতিটা মোমেন্টে ব্যাঙের মত করে বসায় রাখা হয়। নিজেরা কয়েদি, কয়েদি ফিল হচ্ছিল। নিজেরা মনে হচ্ছিল, আমি একটা দাগে আসামি। ততক্ষণে বুঝে ফেলছি যে মানে জেলে ঢুকতেছি মানে কবে বের হবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। তো মেন্টালি প্রিপেয়ারড হয়ে গেছি যে আমি কয়েদি, আমি একটা আমি জেলের আসামি, আমি কয়েদি ফিল হয়ে গেছিলাম।
- মানসম্মান কে কি বলতেছে তুইকারি ছাড়া তো কোন শব্দ নাই। হ্যাঁ, যারা দেখে সালাম দেওয়ার কথা দিনে পাঁচবার, এরা তুইকারি করতেছে। এটা গায়ে লাগাতে পারছি না এবং গায়ে লাগানো থেকে শুরু করে অফ করে দিছি। এই বস কথায় কথায় এই বস, এই যে একটা সিচুয়েশনের মধ্যে প্যান্ট খুলে, প্যান্টের থেকে যত টাকা পয়সা নিয়ে, শুধু বডিটা নিয়ে জেলখানার মধ্যে ঢুকাইছে।
- ঢুকানোর পর, সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হচ্ছে জেলখানার যে বিল্ডিং গুলা, এ একটা বিল্ডিংয়ের আলাদা আলাদা নাম আছে এবং সবচেয়ে নিচের যে সেলটা, এই সেলটার নাম হচ্ছে আমদানি। জেলখানার আমদানি মানে আমরা হইলাম নতুন ইনপুট। একসাথে একটা রুমে 77 জনকে ঢুকানো হইলো, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। এ বলে শেষ করা যাবে না।
- ওই রুমের মধ্যে এই একটা ড্রেস পড়ে আমরা সবাই সেইম ড্রেসে বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত। বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি—চারদিন একই ড্রেসে, একই অবস্থায় আমরা ছিলাম। আমদানির ভিতরে ঢুকে জেলের ভিতরের জীবনটা কি, তোমাদের বলে বুঝাইতে পারবো না যে এটা কি জীবন। যে গেছে কেবলমাত্র সে জানে, এটা বলে বোঝানো যাবে না।
- একটা ছোট টয়লেট। এই টয়লেটের মধ্যে 77 জন মানুষ ঢোকে। 77 জন মানুষ। এটা তো 77 জন কম ছিল। আমরা শুনছি ওই জেলখানার ভিতরে 120 প্লাস মানুষও ছিল। এই 120 প্লাস মানুষ একটা জায়গার মধ্যে ঘুমায়। একটা জায়গার মধ্যে ঘুমায়। ওই যে আঙ্গুলগুলো থাকলে যেরকম থাকে না, একটা বডির সাথে আরেকটা বডি এমনে লেগে থাকে—এমন মানুষ ঘুমায়। না ঘুমাইলে এই পাশের জন্য জায়গা হয় না, এই পাশের জন্যও জায়গা হয় না। তো জীবনে এরকম যে বিছানা তিনবার ঝেড়ে আমরা ঘুমাই সেখানে, যখন এইখানে ঘুমাইতে হচ্ছে। এই মানুষগুলো যখন ঘুমাচ্ছে তখন এক একটাই আশা ছিল যে ছয়টা মানুষ তো একসাথে আছি এবং আরেকটা জিনিস ভেবে আনন্দ পাচ্ছিলাম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করতেছিলাম যে এত অত্যাচারের পরেও গুলি খাইনি এবং আমরা মানে আমার হাড্ডি গুলা ঠিক আছে।
- ---
- তো জেলখানায় যখন গেল, ততক্ষণে তো খাওয়া-দাওয়া ওই যে ডিবি অফিসে যে খাইছি, তারপরে আর হচ্ছে যে গারদে খাইলাম। এরপরে আর কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নাই। আমদানিতে যাওয়ার পরে আমাদের প্রথম খাবার কি দিল? উফ, মানে জেলখানার যে প্লেট, প্লেট, ভিক্ষুক যে ভিক্ষা করে না ওই প্লেটের চাইতে ওই প্লেটটা খারাপ। এই প্লেটের মধ্যে আমাদের ছয় জনকে দিল খিচুড়ি। দেইখা মনে হইলো, কিরে, সবাইকে খিচুড়ি দিছে? ওরে লাইন কি সিরিয়ালি যাইতে হয় এবং কেউ কেউ পায়ও না। হ্যাঁ, এই অবস্থায় আমরা খিচুড়ি খাইলাম। কি মনে হইলো, কি খাইছি মানে কিছু একটা গেছে মুখের ভিতরে, কিছু একটা গেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বলছি প্লেটের দিকে তাকায়ে খাওয়া তো দূরের কথা, চোখ বন্ধ করে শুধু গিলছি।
- এরপরে আসলো ঘুম, না গুরু, ঘুমানো ছাড়া তো উপায় নেই। হাঁটার তো কোন সিস্টেমই নাই। একটা জায়গা, আমার বডিটা যতটুক, এতটুক জায়গা আমার জন্য বরাদ্দ। আমার বডিটা যতটুক, আমার বডিটা ছয় ফিট, আমার জন্য ছয় ফিট জায়গাটাই আছে। এর চেয়ে বেশি এক ইঞ্চি জায়গা ডানে-বামে নাই। আমার ডানে তাজ রাজ ঘুমাইছে, আমার বামে হচ্ছে সানি ঘুমাইছে। সানির উল্টা পাশে গুরু ঘুমাইছে, গুরুর ডান পাশে রিপন স্যার, রিপন স্যারের মাঝখানে এমডি স্যার। আমরা ছয় জন চিটকাইয়া যে বস্তা রাখে না বলে স্যার হচ্ছে ইলিশ ফাইল। ইলিশ ফাইল, রাত হয়ে শুইতে হয় চিত হয়ে। শুইলে চিত হয়ে, চিৎ হয়ে শুইলে জায়গা হয় না, এমনে শুইতে হয়। তো আমি ডান কাত, আমার পাশে হচ্ছে সানি, ডান কাত সানির পাশে আরেক আসামি, ডান কাত তার পাশে ইলিশ ফাইল করে করে আমরা ঘুমাইছি। তো ঘুমাইতে ঘুমাইতে এই অবস্থা।এরপর এই সিচুয়েশন এইতো একটু করে বললাম।
- হ্যাঁ, এইবার স্যার একটু বলে নেই- সেটা হচ্ছে যে ফাহাদ সাহেব যে খাচ্ছিলেন, উনার দুই হাতে হাতের থিকনেস প্রায় ডাবল ডাবল অথবা প্রায় ট্রিপলের কাছাকাছি ছিল। থিকনেস উনার জেনারেল যে থিকনেস হাতের যে, এইটার যে থিকনেসটা, এই থিকনেসটা ডাবলের চেয়ে বেশি ছিল। এত পরিমাণ ফুলে গিয়েছিল। আমাদের সবারই হাতে এই থিকনেস ছিল। তো উনার খাওয়াটা আমার কাছে খুব কষ্টদায়ক মনে হয়েছে। সেটা হচ্ছে, উনি খাচ্ছিলেন হচ্ছে এই যে তিনটা আঙ্গুলকে একখানে করে, এইভাবে করে নিয়ে নিয়ে খাচ্ছিলেন। এইভাবে করে নিয়ে নিয়ে খাচ্ছিলেন। উনি ফাঁস করতে পারছিলেন না, পেরে বাম হাত দিয়ে খেয়েছেন। উনি তো যাই হোক বলুক রিপন স্যার। তারপরে আমরা কথা বলবো, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, আল্লাহ আমাদেরকে এখানে নিয়ে আসছে।
- প্রথমে এটা চিন্তা করতে পারি নাই যে কবে আসবো। আমার টিচারদের দেখে এত শান্তি লাগছে যে আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারবো। এটা খুব অকল্পনীয় ছিল। তো স্যার, একটা কথা অনেকবারই বলতে চাইছে, স্যার বলতে পারে নাই। এই যে আমরা বুধবার থেকে যে একদম জেলখানা পর্যন্ত গেলাম, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল আমরা ফুল ফ্যামিলি থেকে ডিটে আসছিলাম। আমাদের ফ্যামিলির একটা পার্সন জানে না আমরা কোথায় আছি, কিভাবে আছি, কখন কোথায় যাচ্ছি। হ্যাঁ, কখন কোথায় যাচ্ছি এবং সুস্থ আছি কিনা। প্রত্যেকটা ফ্যামিলির প্রত্যেকটা সিঙ্গেল পার্সন, এটা ভেবেই এত অস্থির ছিল, উদগ্রীব ছিল। এটাই নিতে পারতেছিলাম না, আমরা আমাদেরকে মেন্টাল টর্চার করছে। আর আরেকটা কথা বলবো যে থানাতে ফাহাদ স্যার, সানি এবং মনির স্যারের সাথে যে বিহেভিয়ারটা করা হয়েছে, আমরা এতদিন জানতাম যে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা হাইলি এডুকেটেড পার্সন, সবাই বিসিএস ক্যাডার। তাদের থেকে অনেক ভালো ব্যবহার এক্সপেক্ট করছিলাম আমরা। কিন্তু যা পাইছি, সেটা আমাদের মানে অকল্পনীয়। আর কি, এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এটাই বললাম যে আমাদের ধারণাটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। যে এদের কাছ থেকে আমরা জানি যে খারাপ ব্যবহার করা কনস্টেবল যারা পড়াশোনা কম জানে, এসআই পড়াশোনা কম জানে, কিন্তু উর্ধতন কর্মকর্তারা আমাদের সাথে অন্তত ভালো ব্যবহার করে। তাদের বাচ্চাদের আমরা পড়াই, ইভেন আমাদেরকে যে তুইকারি করছে।
- আমার স্যার তো অনলাইনে অনেক আগে থেকে পড়িয়েছেন। আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ, কিন্তু আমি স্টুডেন্ট লাইফ চেয়ে অনেক টিউশনই করেছি। আমি মেজর জেনারেলের ছেলেকে পর্যন্ত পাইছি, আর্মির যে থার্ড চিফ, আর কি। তো উনি পর্যন্ত আমাকে কখনো স্যার ছাড়া বলেন নাই। আর এখানে আমরা যে ব্যবহারটা পেয়েছি, এটা কোনদিন চিন্তা করতে পারি নাই। এরা আমাদের হাতে এই ব্যবহারটা করতে পারবে।
- তো এত কিছুর পরে সবকিছু মিলে আমরা চিন্তা করছি, আল্লাহ, আমরা স্যার আপনার এই টিচারের সম্মানের কথা বলে একটা কথা মনে পড়লো। যখন আমাদেরকে মারতেছিল মনি স্যারকে সবার শেষে, তখন মনি স্যার একটা কথা বলছিল। স্যার, হাতে মাইরেন না। এই হাত দিয়ে আমরা বাচ্চাদের পড়াই। মনি স্যার এই ওয়ার্ডটা মনি স্যার বলছিল। তখন ফাহাদ স্যার একসাথে বলতেছিল, স্যার, আমরা তো আপনাদেরই বাচ্চাদের পড়াই। আপনাদের বাচ্চারা হয়তো কোনো না কোনো টিচারের কাছে পড়বে। যে ভাষা মানে টিচারের যে একটা শিক্ষকের যে একটা সম্মান, সব জায়গায়, এটা কোন সুস্থ সবল মানুষ মেনে নেওয়ার মতো না।
- আরেকটা বিষয়, আমরা মুসলমান মানুষ। আমরা মুসলমান ছিলাম সবাই, আমাদের জন্মই হয়েছে ইবাদত করার জন্য, নামাজ পড়ার জন্য। আমি একটু ইসলামটা প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করি, 100% পারি না। আমাকে যখন প্রথম দেখে থানার ওই ডিসি, ওই ভদ্রলোক, জীবনে খুব ইচ্ছা আছে দেখা করবো। আবার ইনশাআল্লাহ দেখা হবে, সেটা পরে বলছি। কারণ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। জেল খাটছি অফিশিয়ালি, ছয় দিন জেল খাটছি। এবার তো আর কিছু নাই। অফিশিয়ালি ছয় দিন জেলে ছিলাম, এবং সেটা আমাদের ব্যবহার এরকম যে আমরা অনেক বড় ধরনের ক্রাইম করে জেল খাটছে।
- আচ্ছা তো ওই ডিসি আমাকে বলতেছে, এর তো দেখে মনে হচ্ছে জামাত হবে। আমি আবার নামাজ পড়াই এবং সেই ল্যাঙ্গুয়েজটা বলছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তোর কাছে যাবে ম্যাথ শিখতে, তুই নামাজ পড়তে বলবি কেন? এখন সে হিন্দু, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান, আমি জানিনা কি হবে। কিন্তু আমাদের তো সব ধর্মের প্রতি রেস্পেক্ট আছে। তার কাছ থেকে আমরা এক্সপেক্ট করছিলাম। আমার পাঞ্জাবি পড়াছে, আমি মাঝে মাঝে পাঞ্জাবি পড়ি। পাঞ্জাবি পড়া ছিল, ভাগ্যেশ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছে। মাথায় টুপি ছিল না ঐদিন। অন্য কিছু, হ্যাঁ, আমাকে তো জঙ্গি বানায়। একদম ক্রসফায়ার করে দিলে কিছু করার ছিল না। মাঝে মাঝে তাহারিরও বলা হয়েছে, আমাকে বলা হয়েছে। উনাকে বলেছে, আমাকে বলেছে, সানিকে বলেছে। তো সেখানে স্যারকে তো জামাত বলবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক। একটা মানুষ নামাজ পড়লে জামাত হয় না, এটা বলতে চাই।
- স্যার বলুক - তো, আমার কারো প্রতি কোন অভিযোগ নাই। আল্লাহ আমাদেরকে হ্যাঁ, আল্লাহর কাছে বিচার দিব এবং মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ তো করবই। মানে মৃত্যুর স্বার্থ নিতেই হবে, সবাই মরবে। আল্লাহর কাছে বিচার দিব কিয়ামতের দিন এর বিচার চাবো আর কি।
- তবে আমরা, টিচার, আমরা হয়তো খুবই খুবই খুবই নগণ্য, ক্ষুদ্রতম টিচার, নগণ্য মানের টিচার, কিন্তু আমরা তো টিচার। আমরা একটু ভালো ব্যবহার আশা করেছিলাম, সেটা আমরা কোন জায়গায় পাই নাই। বাট, ডিবির সিনারিওটা ডিফারেন্ট ছিল এবং একজন অফিসারের নাম বলেই ফেললাম স্যার। এডিসি আহসান, এহসান, এহসান। আর উনার আন্ডারে ছিল এসআই মতলব। এসআই মতলব সাহেব, মাতলুব। মাতলুব তো এডিসি আহসান এহসান সাহেবের কাছ থেকে আমরা যে ব্যবহারটা পেয়েছি, এটা অসাধারণ ছিল। আল্লাহ উনাকে মানে আরো অনেক অনেক বড় মাপের অফিসার বানাক।
- তো আরেকটা জিনিস স্যার, একটু বলি। আমরা টিচার হিসেবে আমার জীবনটা সার্থক। এই ছয় দিনে যে কয়দিন ছিলাম ওখানে, আমরা সেপারেট হয়ে গেলাম। যখন আমাদের ওই যে আমদানি থেকে আলাদা আলাদা ওয়ার্ডে দিল, তখন সানি, ফাহাদ স্যার স্যার এক রুমে ছিলেন, এমডি স্যার এক রুমে, আমি এক রুমে, রাজ এক রুমে। তখন সবার একটু, বিশেষ করে, একটু মন খারাপ হয়েছে। ও আমাদের খুব ইয়ে ছিল, সাহসী ছিল, কিন্তু আমাদের ছাড়া হয়ে গেছে। একটু মন খারাপ করছে। কিন্তু আমার রুমে ছয়টা স্টুডেন্ট ছিল। ওরা আমার ডিরেক্ট স্টুডেন্ট না, কিন্তু ওরা জানে যে আমি ইউটিউবে আমার লেকচার আছে অনেক। এটা দেখে চিনে ফেলছে এবং ওই ছয়টা ছেলে আমাকে এত ভালোভাবে রাখছে। ওই ছয় দিন আমার জন্য কষ্ট হয় নাই। বাইরের মানুষের জন্য বেশি কষ্ট হইছে। ওরা আমাকে, আমি দুইদিন গোসল করেছি, আমি লুঙ্গিটাও আমি ধুতে পারি না, ওরা ধুয়ে দিছে। দুই একবার খাইছি, আমি ওই মোটা ভাত খাইতে পারতাম না, ওরা আমার জন্য বিস্কিট আনাচ্ছে, সব নিয়ে আসছে। এবং পেটটা আমি একদিনও ধুতে পারি না, ওরা আমাকে ধুয়ে দিছে। পেটটা তো এই তখন মনে হচ্ছে না, এই প্রফেশনটা সার্থক। আর কয়টা ছেলে আসছিল স্যার। আমরা এখন ফাঁসি দিলেও আমাদের আফসোস না। আপনারা আছেন এই কথা কতগুলি কথা শুনে, আমরা একটু আরো সাহস পেয়েছিলাম। আমরা ইনশাল্লাহ কিছু যদি হয়েও যায়, এটা সবার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো হবে ইনশাল্লাহ।
- তবে আরেকটা কথা যে, এই গত কিছুদিন আন্দোলনের যে বাচ্চাগুলি মৃত্যুবরণ করেছে, সবার মানে রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আল্লাহর কাছে। ফরিয়াদ করছি, ওদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, ওদের ফ্যামিলিকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন এবং এর বিনিময়ে আমরা যে একটা ভালো কিছু পেতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ, এটা যেন খুব ভালোভাবে আল্লাহ কবুল করেন। আর কি বলেন স্যার? আরেকটা, একটা জিনিস, একটু একটা জিনিস বারবার একবার তো আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়। রাজ একবার কাঁদে, রিপন স্যার একবার কাঁদে, তো মনি স্যার এবং ফাহাদ স্যার। ফাহাদ স্যার সবসময় আমাদের সাহস দিচ্ছিল। সানি, এর থেকে খারাপ কিছু তো হইতে পারতো। সানি, আমি এটা বলছিলাম সানিরে যে, সানি থানায় হচ্ছে, আমাদেরকে গুলি করতে পারতো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং তোমাদের দোয়া ছিল যে থানায় আমাদের গুলি করে পরে হচ্ছে। মনি স্যার চেষ্টা করছে বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে মজা দিয়ে রাখার।
- হ্যাঁ, রাজুকে সবচাইতে বেশি করছে। রাজের সাথে যাতে উৎফুল্ল রাখা, মানে ওই মোমেন্টে যদি মেন্টালি আমরা ডিপ্রেসড হইতাম, তাহলে আমি মারা যাইতাম। আমি দেখতেছিলাম এমডি স্যারকে, মানে পাথর মানুষ। পাথর হয়ে যাইতে দেখছি। ওইদিন আমি প্রথম দুইদিন তো স্যারের মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হয় নাই। কোন স্যার যেমন আছে, মানে স্যার শুধু আমি, শুধু দেখতেছি স্যার, শুধু মানে ফুল পাথর, একটা মানুষ। আমি সিকুয়েন্সিয়ালি, আমি সিকুয়েন্সিয়ালি বলি। আমদানিতে আসলাম না। আমদানিতে আমরা কতক্ষণ ছিলাম, আমদানিতে একদিন, একদিন। বিভৎস একদিন, বিভৎস একদিন। 77টা মানুষ একটা রুমের মধ্যে। তিন বেলা খায়। তিন বেলা 77 জন মানুষ। তিন বেলা ওই থালাবাটি ধোয়ার জন্য সিরিয়াল দেয়, তারপর খায়। এবার ওই থালাবাটি আবার ধোয়া, ধোয়ার পরে আবার রাখে। বিচিত্র ধরনের মানুষ একসাথে। সিগারেটের গন্ধে থাকতে পারি নাই। ওদেরকে বুঝাইতে পারতেছি না যে তোরা সিগারেট খাইস। না, যারা আমাদের সাথে ছিল, মানে মনে হবে যেন টিয়ার মারছে রুমের মধ্যে। কিন্তু সিগারেট খাচ্ছে। যাই হোক, এই অবস্থা। এখন এই এই অবস্থায় আমাদেরকে সবাইরে ডাকলো, আমাদের আবার হচ্ছে। আমাদের কি কার্ড বানালো। কেস কার্ড, কেস কার্ড, কেস কার্ড বানাইলো। আমাদের সবার মামলা আর ধারা। মামলা আর ধারা। আমাদের ধারা কি কি জানি। 10টা ধারা ছিল, 11টা ধারা ছিল। আমার ওর দশটা ধারা ছিল। বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটা কেস কার্ড। আমরা ভাঙচুর, আমরা বিস্ফোরক, আমরা মেট্রোল ভাঙছি, আমরা পুলিশের উপর হামলা করছি। মানে এটেম, মানে যত ধারা সম্ভব সব ধারা দিছে। আমি নিজে ধারা গুনতে পারতেছি না, যে এত ধারায় আমি মামলা খাইছি। যাই হোক, আমদানি থেকে আমাদেরকে ওয়ার্ডে নেওয়া হইল।
- আমি ছিলাম পাঁচের, দুয়ে আমি সানি গুরু, পাঁচের দুয়ে ছয়ের, ছয়ের চার, ছয়ের পাঁচে, ছয়ের পাঁচে দুই, এর দুই, এর চার, আর পাঁচের তিনে। আমরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছিলাম। এই গল্পটা 10 মিনিটে শেষ করতেই হবে মজার গল্প। এবার যখন আমি ওয়ার্ডে আসলাম, তখন জেলটাকে আরেকটু আত্মস্থ করতে পারছি। যে ব্লাডের সাথে মিশতেছে, যে জেলটা কেমন, মানে জেলে কিভাবে থাকতে হবে, বছরের পর বছর মানুষ জেলে থাকে কেমনে। তো আমাদেরকে ওয়ার্ডে নিয়ে গেল। নতুন মানুষ, 32 জন মানুষের মধ্যে আমরা ঢুকলাম তিনজন। এখন ঢোকার পরে কোথায় ঘুমাবো বুঝতেছি না। একটা তো সবাই ঘুমাচ্ছে, এমন সময় ওই ওয়ার্ডের মধ্যে, প্রতিটা ওয়ার্ডে দুইজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছে। যাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ইনচার্জ, আরেকজন হচ্ছে রাইটার। তাদের কাছে আমাদের নাম এন্ট্রি হইলো, কেস কার্ডটা জমা দিলাম। আমরা হচ্ছি আমদানি থেকে, আমদানীকৃত নতুন আসামি যারা এখন ওয়ার্ডে থাকবো। এবার ওয়ার্ডে ঢোকার পরে মনে হইলো যে, এটা আমাদের বাসা বানাইতে হবে। এবং কারাগারের সবচাইতে বাজে বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে, মানে জঘন্যতম ঘটনা হচ্ছে যে, মানুষের কিছু করার নাই, মানে আমার, আমার কিছু করার নাই, আমার জেলের ভিতরে কিছু করার নাই। সময় কাটে না, সময় কাটে না। মানে যোহর, মানে আসরের নামাজ থেকে শুরু করে জেলে, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছি। সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছি জেলের মধ্যে। জামাতের সহিত নামাজ হয়। জেলের ভিতরে প্রত্যেকটা ছেলে আযান হয়, প্রত্যেকটা ছেলে জামাত হয়, প্রত্যেকটা ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়। এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এশারের নামাজের পরে আমাদের খাওয়া-দাওয়া হয়। এশারের নামাজের পরে জেলের ভিতরে ঘুমায়, ঘুম চাইলে কেউ গল্প করতে পারে, যার যার গল্প শেয়ার করতে পারে। ঘুম এবং সাড়ে তিনটায় আমাদের ঘুম ভাঙ্গে, সাড়ে তিনটায় ফজরের আযান হবে, সবাইকে ঘুম থেকে উঠতে হয়। ঘুমানোর পর ঠিক কয়টার সময়, সাড়ে চারটায়, সাড়ে চারটার সময় আমাদেরকে ফাইল হয়ে বসতে হয়। চারজন করে একটা ফাইল। জেলের ভিতরে নিয়ম হচ্ছে চারজন করে একসাথে ব্যাঙের মত বসা, বসে ফাইল হবে। কারারক্ষী প্রতিদিন দুইবার, তিনবার যতবার ইচ্ছা আসে, আসার পরে হচ্ছে ফাইল গুনে, গুনে, গুনে চেক করে যে, এই রুমে যতজন ছিল, ততজন আছে কিনা। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। এরপরে সকালের খাবার আনার জন্য যাইতে হয়। এবং আমি মেনশন নট, এই কেরানীগঞ্জের জেলখানার সবচাইতে মজার বিষয়, সবচাইতে আনন্দদায়ক বিষয় ছিল জেলখানার পানি। পানিটা এত বিশুদ্ধ, পানিটা এত ডিপ, আমি শুধু পানি খেয়েছিলাম। এবং জেলখানার ভাত যে কতটা ভয়ানক কষ্টের, খাবার কতটা ভয়ানক কষ্টের, সবজি আর কতটা ভয়ানক কষ্টের, ডাল। ভাত, সবজি, ডাল, প্রতিবার ভাত, সবজি, ডাল, সকালে রুটি, হালুয়া, রুটি, সবজি, রুটি, সবজি আর রাতে আর দুপুরে ভাত, ডাল, সবজি, ভাত, ডাল, সবজি। একই খাবার। কিন্তু যখন আমাদের পরিবার আমাদেরকে টাকা দিল, তখন কিছু কিনে কিনে খাইতে পারলাম। আর কি। সো, এই ছিল মোটামুটিভাবে জেলখানার বর্ণনা। আর নতুন করে কিছু কিছু বলতে চাই না।
- স্যার, জেলখানার দ্বিতীয় দিনের একটা ঘটনা, সেটা সবচাইতে বেশি কাঁদাইছে। ফাহাদ স্যার তো সচরাচর সাহস দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে। তো দ্বিতীয় দিন, সকালবেলায় হঠাৎ করে দেখি ফাহাদ স্যার জানালায় মাথাটা লাগায়, বাইরের দিকে তাকায় আছে। তো কান্না পাইছে, কি করবো। আমি তখন আসছি, এসে স্যারের পাশে দাঁড়াইছি। স্যারের পাশে দাঁড়ানোর পরে, তার আগে টুকটাক আমরা সবাই একটু কান্নাকাটি করছি। করছি। বাচ্চা সবসময় সাহস দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। তো ওই সময় এসে আমি স্যারের পাশে এসে দাঁড়াইছি। দেখি স্যারের চোখটা ছলমল করতেছে। আমি জিজ্ঞেস করতেছি, স্যার কি হইছে, আপনার কি হইলো? স্যার তখন বলতেছে কি? যে, আমার মেয়েটা প্রত্যেকদিন সকালে সানি ঘুমের থেকে উঠেই বলে, বাবা কোথায় বাবা, বাবা বলে চিৎকার দেয়। আমার মেয়েটা এখন কাকে নিতেছে বলে। স্যারদের দুই চোখ দিয়ে, মানে অঝরে পানি বের হইতেছে।
- তখন স্যারকে, তখন আমি জড়ায় ধরে বলতেছি, স্যার আপনি ভেঙে পড়লে আমাদের কি হবে, আমরা তো আপনারে দেখে আছি স্যার। তখন আমার চোখের ভিতর আসতেছিল, আমার বাবা রেখে গেছি অসুস্থ মানুষ, ডান পায়ের লেগামেন্ট ছেড়া, আব্বু জন্ডিস। আব্বুর চেহারাটা মানে ভাবতেছিলাম যে, তার এখন সিচুয়েশনটা কি, মানে বাবার যে একটা ফিল। জেলখানে আমরা কিন্তু ইউজ টু হয়ে গেছিলাম এক দুইদিন পরে, কিন্তু এই যে পরিবারের মানুষগুলো বাইরের যে দৃশ্যগুলো, ছয়টা দিন কারো সাথে কোন কথা নাই। ছয়টা দিন, স্যার আমরা এখানে যারা আছি, সবাইকে স্যার অনেক বেশি ভালোবাসি। আমাদের যে শাকিব বাংলা পড়ায়, ও তো স্যারের স্টুডেন্ট। স্যার যে ওরে কতটা ভালোবাসে, মানে থানায় বুঝছি। থানায় বারবার, তোমরা জানো আমাদের অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে, তোমরা জানো আমরা কে, কতটা ইনভলভমেন্ট ছিলাম। স্যার কতটুকু আমি, কতটুকু মনীষ, স্যার কতটুকু রাজ, শাকিব কে কতটুকু। কয়েকবার আমাদেরকে বলছে, শাকিবকে ফোন দেন, শাকিবকে আনান, এই শাকিব হাসানকে, ওকে আনান, ওর নাম্বার দেন। আমরা একবারের জন্য ওর পরিচয় নেই, নাই। একেকবার বলছে আর স্যারকে মারছে, আমাকে মারছে, মানে ওইদিন আমি শুধু দেখতেছিলাম স্যার।
- পরে স্যার এসে বলতেছে, সানি, আল্লাহ সহায়, এখানে আপনি আমি মাইর খাইছি, আমার শাকিব আসে নাই, ও ডেড হয়ে যাইতো, আমার শাকিব আসে নাই। শাকিব তো এটা সহ্য করতে পারছে যে পরিমাণ মার, আমি সহ্য করতে পারছি বা সানি সহ্য করতে পারছে। আমারে কমসে কম 22 থেকে 25 টা বাড়ি দিছে পিছনে, এবং মোটা রোলার মানে নিয়ে সোফার উপরে উপর করে শোয়া। তো আমি দেখতেছিলাম যে, তখন আমি ভাবতেছিলাম যে, শিক্ষক যে বাবা হয়, এটা তার আরেকটা নমুনা। যে স্যার, মানে আমরা ভিতরে, কিন্তু স্যার বাইরে শাকিবের কথা চিন্তা করতেছে। স্যার ভাবতেছে, আল্লাহ, স্যার বারবার বলতেছে, আল্লাহ, যাদের নাম বলতেছিল, আমাদেরকে আল্লাহ শাকিবরে হেফাজতে ও যেন একটু দূরে সরে থাকে।
- ওরে যেন হাতে না গুরু। গুরুকে নিয়ে আমার যথেষ্ট কনফিডেন্স আছে, মাইর সহ্য করতে পারবে। শক্ত শরীর দেখলে মনে হবে কিছু নেই, কিন্তু গুরু অনেক বেশি পরিমাণে স্ট্রং ছিল। আমার চেয়ে, আমিও সামটাইমস হচ্ছে ইমোশনাল ছিলাম, কিন্তু গুরু অনেক স্ট্রং ছিল। এবং এর মধ্যে যে মজাগুলা করে আমাদেরকে যে এন্টারটেইন করতে, মানে আমাদেরকে এন্টারটেইন করতে হচ্ছিল, মানে আমি যদি কোনভাবে মনে করি যে আমার মন খারাপ, তাইলে আমি মরে যাইতাম। কিন্তু আমাদেরকে ফিল করতে হবে যে, না, মানে ফিল কি করতে হবে? গুরু সূর্য উঠবে, মানে আমরা মুক্ত হব, আমরা একদিন বের হবো। এক একটা ওয়াক্ত অফিসে আসি, অফিসে আসরের নামাজের পরে, মাগরিব কখন আসে, টের পায়নি, চোখের পলকে চলে যায়। আর ওইখানে আসরের থেকে মাগরিব, মানে জেলখানার সবচেয়ে বাজে বিষয় হচ্ছে আসরের নামাজ পড়ছি, আসরের নামাজ পড়ার পরে কথা বলতেছি, হ্যাঁ, এত কথা বলছি, একটু ঘুমায়ে যাইতেছি, ঘুমায়ে গেছি, এত গল্প করছি। ওমা, মাগরিবের নামাজি মাগরিবের আজান দেয় না। ঘড়ি তো নাই, দেখতে পারতেছি না কয়টা বাজে। মনে হচ্ছে দুই ঘণ্টা চলে গেছে, এই দুই ঘণ্টা চলে গেছে। যখন ফিলিংস হয়, তারও মনে হয় 20 মিনিট পরে মাগরিবের আজান হইছে। প্রতিটা মোমেন্টে মনে হইছে যে, এরে আল্লাহ, একদিন তো মনে হচ্ছে এক মাসের সমান।
- যাই হোক, এইভাবে আমাদের জীবনটা পার হয়েছে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট, আমি শেষ করতে হবে। আমি বুঝতে পারিনি লাইভ এত লম্বা হবে, মানে আমি কতটুক বলবো, এটাও আমরা আশা করি না। আমি লাস্ট মোমেন্টে যেখানে আসতে চাই, এফটির পরিকল্পনা কি, এবং এফটি কেমনে সামনে আগাবে, এবং আরো একটা ইম্পর্টেন্ট বিষয়, আমার আমরা যে ছয়জনের গল্প তোমরা শুনছো, এটা তো একপাশের গল্প। আরেক পাশের গল্প আছে, সেই গল্পটা শোনানো লাগবে। আমাদের পরিবারের বাকি মানুষ, মানুষগুলো, তারা কিভাবে কানেক্ট করছে, আমি তাজকে, জেরিনকে, রিফাত, তাজ, জেরিন, রিফাত সাইড থেকে চেষ্টা করছে কিভাবে আমাদেরকে, মানে উকিলের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়। এবং যেটা হচ্ছে যে, তারা এগুলি জানেও না, কখনো এগুলি শোনেও নাই। কিভাবে এই জায়গাগুলিতে কার কাছে যেতে হবে, কে উকিল হবে, উকিলের কি করবে, উকিল এই জিনিসগুলি তারা কোনদিন করে নাই বা কোনদিন শুনেও নাই। কিন্তু সামহাউ ম্যানেজড দ্যাট। ওয়াজ এ গ্রেট সাপোর্ট, এন্ড আলহামদুলিল্লাহ, যেটা আল্লাহ হয়তো ম্যানেজ করে দিছে, এটা একটা বিশাল ব্যাপার। আর আমি, মানে আমার জায়গা থেকে আমি আসলে এইটা বলবো যে, আমি আর মানে বর্ণনাতে যেতে চাচ্ছি না। বর্ণনা যেটুকু দেয়া হয়েছে, আমার মনে হয় এনাফ। আর কিন্তু একটা জায়গা যেটা যে মারধর করা হয়েছে, বা ওখানে খারাপ, মানে যেই জায়গাটাতে, মানে মারধরটা হয়তো ম্যানেজ হবে, বা এটা মিনিমাইজ হবে, বা এটা রিকভার হবে। কিন্তু যেই জায়গাটা যে কিছু ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, এই ভাষাগুলি মনে হয় না আমি উচ্চারণ করতে পারবো। তো এইটা আমি, মানে ওখান থেকে আমি এই যে চুপ ছিলাম, আমি এখনো নিতে পারছি না যে, এই ভাষাগুলি কিভাবে বলা হইলো।
- তো, এনিওয়ে, তারা আমাদেরকে যথেষ্ট রেস্পেক্ট করেছে। আমরা খুব হ্যাপি যে পরিবারের দিক থেকে আমাদের টেনশন, আমাদের চিন্তা, আমাদের ভাবনা এগুলি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত ছিলাম এবং কিছু করার ছিল না। তো, এইখানেও আমরা মনে করি, এরকমও যে যদি কারো জীবনে এই ধরনের কোন পরিস্থিতি আসে, আমার মনে হয় আমাদের আজকের এই শেয়ারিংটা তাদেরকে কোনো না কোনো ভাবে সাপোর্ট করবে, কোনো না কোনো ভাবে হেল্প করবে। সে কিভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, কিভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে টিকে থাকতে হবে, এগুলিতে হেল্প করবে। আমি মনে করি আমাদের এই শেয়ারিংটা হচ্ছে ওই জায়গা থেকে।
- আর একটা জিনিস আমি বলবো, যে আমরা আসলে এরই মধ্যে খুব চিন্তিত ছিলাম যে আমরা কি আমাদের অ্যাফটির কার্যক্রমটা আবার কবে থেকে স্টার্ট করতে পারবো। ফুল সুইং যে কি, আমরা কবে ছাড়া পাবো, এইটাও আমাদের ইয়া ছিল না। তো আলহামদুলিল্লাহ, যে আমরা খুব আর্লি সবাই মুক্ত হতে পেরেছি এবং আসতে পেরেছি। এসে আমরা আজকে যে লাইভে এসছি, এবং আমি খুব...
- এবং আরেকটা জায়গাতে, আমরা খুব ফিল করি আমাদের যারা স্টুডেন্ট, ইভেন থানাতে যখন আমরা তখন...
- থানার এডিসি সাহেব, উনিও বলতেছিলেন যে, কি ব্যাপার, আপনারা কি এমন করেন, এত মেসেজ, এত কমেন্টস, এত এই মিনিটের মধ্যে এত কিছু কিভাবে ইয়া হয়। তো, এই যে, এইটা কিন্তু আমি জানিনা, ওনারা হয়তো কিভাবে রিয়েলাইজ করেছেন, বুঝতে পেরেছেন কিনা। কারণ এটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, আমাদের লক্ষ লক্ষ স্টুডেন্ট সারা বাংলাদেশে আমাদের এই প্লাটফর্মের সাথে ইনভলভ। তারা পড়ে, আমরা পড়ায়, আমরা মানুষ গড়ার কারিগর তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশের প্রত্যাশায়, আমরা এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কে ত্বরান্বিত করার জন্য, আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস যে শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা তাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব।
- আমি এই শিক্ষা, আমি আমরা তোমাদের এই মানে কমেন্টস শোনা এবং কিছু জানা, যখনই আমরা গেছি, যেখানেই গেছি, অনেক অফিসারের ছেলেমেয়েরা আমাদের টিচারদেরকে দেখে, তারা আপ্লুত এবং তারা আমাদের এই টিচারদের সামনে পেয়ে, অনেক অফিসাররাও খুব ইয়া করছেন। ওই জায়গাগুলি আমাদের জন্য ছিল খুব আনন্দের এবং খুব মানে বুকটা ভরে যাওয়ার মত একটা সময় ছিল। এই জিনিসগুলি তো এগুলি আমাদেরকে সাহস জুগিয়েছে। এই জার্নিটার মধ্য দিয়ে যেতে আমাদেরকে যথেষ্ট হেল্প করেছে। আমরা উত্তর থাকার জন্য, আমরা এইটাকে সয়ে নেওয়ার জন্য, আমরা খুব আর নিজেদের মধ্যে আমাদের অনেক আলোচনা। শুধু শুধু আমরা একটা কথা বলে, চেষ্টা করছি একে অপরকে সাপোর্ট দিয়ে আমরা মেন্টালি থাকার জন্য। তো ওই জায়গায় তো আমরা তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের সমস্ত স্টুডেন্ট, আমাদের সমস্ত প্যারেন্টস, এবং আমাদের যারা আমাদেরকে বিভিন্ন এই কমেন্টস করে বা বিভিন্ন ইয়াতে পরবর্তীতে আমরা শুনেছি, আমাদের কাছে মেসেজ মানে গিয়েছে। এরকম যে, হ্যাঁ, অনেকেই আমাদের নিয়ে খুব মানে আশা করছে। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো আমরা ছাড়া পাবো, বা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন অনেকে। উই আর এক্সট্রিমলি গ্রেটফুল টু অল অফ ইউ। এটা আমরা প্রচন্ডভাবে গ্রেটফুল, আর আমরা আরেকটা জায়গা এখন একটু আমি বলি যে, আমাদের আসলে ইনশাআল্লাহ যেহেতু আমরা আজকে আমাদের সামনে সব টিচাররা আছেন এবং আমরা সবাই আজকে একসাথে হয়েছি। আজকে আমরা একটা ডিসিশন নেব। আমাদের সমস্ত অ্যাপটির সকল প্রোগ্রাম ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আমরা আশা করছি, আগামী শনিবার থেকে আমরা তোমাদের লাইভ ক্লাস ইনশাআল্লাহ সবগুলি। আমরা মানে তোমাদের অন ইয়ার এ যাব এবং রেগুলারলি আমরা তোমাদের সব কোর্সগুলি আমরা ইনশাল্লাহ চালু করে দিব। এবং এই আশা করছি তোমাদের সাথে আমরা আবারো সেই মানে পুরনো ধাঁছে, পুরনো অবস্থানে গিয়ে, আমরা তোমাদের সকল এবং যেইটুক লস হয়েছে, আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকেও আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। অনেকগুলি ইস্যু ছিল, অনেকগুলি বিষয় ছিল, অনেক অনেক প্ল্যান ছিল। নেক্সট টাইম আমাদের কিছু পাবলিকেশনের বিষয় ছিল, এগুলিতে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। বাট ইনশাআল্লাহ, আমাদের সেই সামর্থ্য আছে, আমাদের সেই ক্যাপাসিটি আছে, আমাদের সেই রকম মানসিকতা আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা সবকিছুকে একটা রেগুলার অবস্থায় নিয়ে আসবো। আর তোমাদের যেটুকু আমরা দিতে পারিনি, যে কিছু ক্লাস মিস হয়েছে, আমরা আশা করছি, এইটা খুব তাড়াতাড়ি আমরা তোমাদের সকল ক্লাস, যেগুলি লস হয়েছে, এগুলি আমরা রিকভার করে দিব ইনশাআল্লাহ। এবং আমরা আমরা সবাই এটা নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা যেই অবস্থানে ছিলাম, আমরা আরো সতস্ফুর্তভাবে, আরো অনেক বেশি এফোর্ট নিয়ে আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়াবো। শুধু তোমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে যাবে। সবাই অনেক ভালো থাকো। এন্ডিং এ কিছু কথা বলতে চাই, কেউ আমার এখানে প্রত্যেকটা টিচার আছেন, আমার রুবেদ স্যার, দীপ স্যার, মুজাহিদ স্যার, রাসেল স্যার, তাজ স্যার, সাকিব, আমার অফিসের ম্যানেজার, জেরিন, আমার রিফাত, মামুন স্যার, মৃদুল স্যার, সাইফুল স্যার, রাসেল স্যার, আমার বন্ধু, আমার বন্ধুবর, কি বলবো আসপেক্ট সিরিজের আমার বন্ধুবর। মানে তোমারে আসলে মানে তোমার কি পরিচয় করাবো, তুমি আমার সামর্থ্য, তোমার শক্তি, আমার সজীব, আমার ফজল স্যার, আমার জিহাদ স্যার, প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়ে যে পরিবারটা আমাদের হইছে। হুম, তোমরা টাইম সে যে আসলে কে কেমন সময় বলে দেয়। কেউ কেউ হচ্ছে, মানে আমি জানিনা, আমি এখন কোন তুলনা করতে চাই না। তোমরা প্লিজ কোন তুলনা কইরো না।
Advertisement
Add Comment
Please, Sign In to add comment
Advertisement